Saturday, January 30, 2016

গোবিন্দভোগ বনান গোবিন্দ বাবু / ড. মোহাম্মদ আমীন

বিড়ম্বনা: পর্ব নং ২৩

মুখ্যসচিব কথা বলবেন। 
চেয়ার হতে লাফ দিয়ে উঠেন অফিসার। হার্টবিট বেড়ে দ্বিগুণ, শীতের প্রভাতেও ঘাম।ভয়ে চোখের পাতা নাচছে। বুকটা টিপ টিপ।মুখ্য সচিবের ফোন, চাট্টিখানি কথা নয়।সিনিয়রেরা সাধারণত দুসংবাদ দেন। সিনিয়রদের রিং মানে শঙ্কা।  
রিসিভার মুখে লাগিয়ে পরম শ্রদ্ধায় সালাম দেন: কেমন আছেন স্যার? ভাবী-বাচ্চারা ভলো তো?  
আমি স্যারের পিএ। একটু হোল্ড করুন, স্যারকে দিচ্ছি। 
লজ্জা পেয়ে যান অফিসার।পিএর বাচ্চাকে সালাম দিতে হয়েছে, স্যার ডাকতে হয়েছে। নাপিতের প্রভু হবার চেয়ে রাজার নাপিত হওয়া ভালো। রিসিভার কানে লাগিয়ে মুখ্য স্যারের অপেক্ষায় থাকেন অফিসার। ততক্ষণে গলা শুকিয়ে সাহারা।  
বিত্রশ সেকেন্ড পর মুখ্য সচিব লাইনে আসেন : মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর পোগ্রাম পেয়েছ? 
ঢোক গিলেন অফিসার : জ্বী স্যার।এনি প্রবলেম? 
না, স্যার। 
পিএম-এর মেনু নিয়ে আলাপ করার জন্য রিং করেছি। 
এতক্ষণে অফিসারের গলাটা ভিজে আসে। যাই হোক, দুসংবাদ নয়। 
বলুন স্যার।  
কাগজ কলম নিয়েছ? 
অফিসারের সামনে কলম আছে, কাগজ নেই। কাগজের কী প্রয়োজন, দেখা যাক কী বলেন, স্মরণশক্তি তো আর মরে যায়নি! সামনে কাগজ নেই বলাটা অযোগ্যতা। মুখ্য সচিব মাইন্ড করতে পারেন। বড়দের মাইন্ড সদ্য-যৌবনা রমণীর মতো স্পর্শকাতর। আগুনের মতো শুধু ঝিলিক মারে। 
চুপ মেরে কেন? কাগজ-কলম নিয়েছ? ধমক মারেন মুখ্য সচিব। 
জ্বি স্যার; সব আছে স্যার, কাগজ-কলম, কম্পিউটার, টাইপরাইটার, স্যার।  
মুখ্য সচিব : গোবিন্দভোগ- - - হ্যালো, তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? 
জ্বি স্যার। এক নম্বর - - - টেলিফোন বিশ্রী আওয়াজ দিচ্ছে কেন? আমার কথা শুনছ তো? 
জ্বি স্যার। 
চাল প্রধানমন্ত্রীর খুব প্রিয়। চাকতাই পাওয়া যাবে। স্যার।গত বারও আনা হয়েছিল। 
স্যার। 
গোবিন্দভোগ এক নম্বর। 
 এক নম্বর দোকান তো স্যার? 
দেখ, অন্য কোনও চাল আনবে না। বুঝতে পেরেছ?  
স্যার। 
রিসিভার রেখে দেড় গ্লাস পানি টানেন অফিসার। মুখ্য সচিবের সঙ্গে টেলিফোন-আলাপে স্যার করতে করতে মুখে ফেনা। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ‌‘স্যারেএত ব্যস্ত ছিল যে, কান-মন ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। এক ঘণ্টা পর মোস্তানকে ডাক দেন। তিনি কেনাকাটা দেখভাল করেন।  
অফিসার : মুখ্য সচিব রিং করেছিলেন। 
জ্বি স্যার। 
পিএম-এর মেনু নিয়ে কথা বলেছেন। ম্যাসেজটা নোট কর। স্যার যে রকম বলেছেন,..চাকতাই-এর গোবিন্দবাবুর নম্বর দোকানের চাল প্রধানমন্ত্রীর খুব প্রিয়। গোবিন্দ বাবুর নম্বর দোকান হতে পিএম এর জন্য চাল কিনতে হবে। ভালো চাল আনতে হবে গোবিন্দ বাবুকে বলিও ভালো চাল দেওয়ার জন্য। গোবিন্দবাবু খুব ভালো লোক। পিএম গত বার যখন এসেছিলেন তখনও গোবিন্দ বাবুর দোকান হতে কেনা-চাল দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল। 
বুঝেছ?জ্বি স্যার। 
দেখ অন্য কোনও দোকানের চাল আনবে না। পিএম কিন্তু ভাত দেখলে বুঝতে পারবেন। দেশ চালাচ্ছেন তিনি। সাবধান, গোবিন্দ বাবুর দোকান ছাড়া অন্য দোকান হতে কিনিও না। আমার চাকুরিটা খেও না বাপ্ 
মোস্তান : ঠিক আছে স্যার, গোবিন্দ বাবুর দোকান হতে চাল কিনব। কিন্তু কী চালের কথা বলেছেন? 
এবার অফিসার মহা চিন্তায় পড়ে যান। মুখ্যসচিবকে রিং করে জেনে নেওয়া যায় কিন্তু ঠিক হবে না। তবু করা দরকার। 
রিং করেন মুখসচিবকে : স্যার, কী চাল জানি বলছিলেন? 
তুমি লিখে নাওনি। 
জ্বি, নিয়েছি। 
তা হলে আবার ডিস্টার্ব করছ কেন? আমাকে পিএম ডেকেছেন। পরে কথা বল। 
অফিসার ঘামে জবজবে, আল্লাহ বাঁচাইছে। 
গোবিন্দ বাবুকে বলিও, গত বার যে চাল দিয়েছিলেন এবারও সে চাল দিতে। 
মোস্তান গাড়ি নিয়ে নাজিরের সাথে চাকতাই রওয়ানা দেন। পুরো চাকতাই তন্নতন্ন; গোবিন্দ বাবুর দোকান পাওয়া যায় না। কেউ চেনে না।এখন কী করা? 
অফিসারকে রিং দেন: পুরো চাকতাই তন্নতন্ন করেছি। গোবিন্দ বাবুর দোকান পাইনি। একজন বললেন, তিনি দোকান বিক্রি করে ভারত চলে গিয়েছেন। 
অফিসার : তোমাদের দিয়ে কোনো কাজ হবে না। দরকার হলে ভারত যাও। 
মোস্তান : মুখ্য সচিবকে রিং করে দোকানের ঠিকানাটা জেনে নেওয়া যায়।  
অফিসার : পাগল হয়েছ তুমি? এই সামান্য বিষয় নিয়ে মুখ্য সচিবকে রিং! এসপি সাহেবকে লাগাও। গোবিন্দ শালাকে বেঁধে নিয়ে আসতে হবে। 
চার ঘণ্টা পর এসপি রিং করেন : চাকতাই না, পুরো শহরে গোবিন্দবাবু নামের কোন চালের দোকানদার নেই। 
এবার বুদ্ধি মারেন অফিসার: মোস্তান, তুমি যে কোনো একটা দোকান হতে ভালো চাল কিনে নাও।  
কিন্তু স্যার রিসিট? আমতা আমতা করে বললেন মোস্তান। 
প্রেসে গিয়ে ‌‌‘গোবিন্দ বাবুর এক নম্বর দোকানহ্যাডিং দিয়ে একটা রিসিট ছাপিয়ে নাও। 
যথানির্দেশ। 
সরু চালই এনেছেন মোস্তান সাহেব। চিনিগুরা। খেতে বসে মুখ্য সচিব প্রশ্ন করেন অফিসারকে : তোমাকে না বলেছিলাম গোবিন্দভোগ চাল আনতে? 
জ্বি স্যার!তো এগুলো কী চাল এনেছো? 
অফিসারের গলা শুকিয়ে কাঠ। শালার কোথায় গোবিন্দভোগ চাল, আর কোথায় গোবিন্দ বাবুর দোকান। 
পাওনি বুঝি? জনাতে চান মুখ্যসচিব। 
তাঁর হাতে এক দলা ভাত মুখে ঢুকার অপেক্ষা।জ্বি স্যার, পাইনি। 
এজন্য চিনিগুরা? খারাপ না। 
থ্যাংক ইউ স্যার। 
মন্দের ভালো। তবে গোবিন্দভোগ চাল চাকতাই পাওনি এমনটি আর কাউকে বলিও না। পাগল ডাকবে।লাফ দিয়ে উঠেন অফিসার। যে অপরাধ তার শাস্তি কমপক্ষে লাথি হওয়া উচিত।ভাগ্যিস তেমনটি করেননি। এতক্ষণ পর অফিসার হাসলেন।  
আল্লাহ বড় মেহেরবান